কলাপাড়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারে চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে বেকার যুবদের | আপন নিউজ

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে শেষ সময়ে প্রচারনায় ব্যস্ত প্রার্থীরা; জরিপে এগিয়ে মোতাহার আমতলী একে স্কুল মহাসড়ক থেকে ৪৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কলাপাড়ায় দূর্যোগ সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ট্রাক কেনার কথা বলে আপন ভাতিজীর টাকা নিয়ে উধাও আপন চাচা জমে উঠেছে আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন; তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস আমতলীতে ডায়েরীয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংঙ্কট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ জনের বেডে ৩১ জনের চিকিৎসা! কলাপাড়ায় ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ গলাচিপায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, শিশুর মৃ’ত্যু কলাপাড়ায় জমিসংক্রান্ত বিষয় সালিশি বৈঠক শেষে হামলা; তিনজনকে কু’পি’য়ে জ’খ’ম কলাপাড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মা-ছেলে ও ছেলের বউকে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ
কলাপাড়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারে চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে বেকার যুবদের

কলাপাড়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারে চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে বেকার যুবদের

কলাপাড়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারে চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে বেকার যুবদের

গোফরান পলাশ, বিশেষ প্রতিবেদকঃ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে কলাপাড়ায় করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও সচল রয়েছে কৃষিকাজ। কৃষকের নিরলস পরিশ্রম, প্রযুক্তির ব্যবহারে চাষাবাদ এবং মাঠ পর্যায়ে সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য এনেছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া কৃষককে কৃষি কাজে আগ্রহী করে তুলতে সরকারী প্রনোদনা, বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান, কৃষকের বাড়ী বাড়ী গিয়ে পরামর্শ, উঠান বৈঠকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা, ক্ষতিকর পোকা নিধনে কীট নাশকের ব্যবহার, মিষ্টি পানি সংরক্ষনে স্লুইজ গেট নিয়ন্ত্রন ও পুকুর খনন, উৎপাদিত কৃষি পন্য সংরক্ষন, বাজারজাত করন এবং রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ও বেসরকারী ব্যাংক থেকে কৃষি ঋন বিতরনে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরনে কৃষিতে এমন সফলতা পেয়েছে কৃষক, এমনটাই দাবী স্থানীয় কৃষি বিভাগের।




দুর্যোগ প্রবন সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলীয় কলাপাড়া উপজেলায় সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় ’ইয়াস’ সৃষ্টি অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি অরক্ষিত বেড়িবাঁধের ভেতর প্রবেশ করলেও কৃষিতে এর তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। শত প্রতিক‚লতা স্বত্ত্বেও স্বর্নিভরতা অর্জনের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কৃষি সাফল্য। আর এর নেপথ্যে রয়েছে রোদে পোড়া, বৃষ্টিতে ভেজা কৃষি পেশায় নিয়োজিত সেই মানুষ গুলোর নিরলস পরিশ্রম। কেননা পরিবেশ ও প্রকৃতি অনুকূল হলে এখানকার কৃষকের হাতে সোনা ফলে।

জানা যায়, গত ক’বছরে ধান, গম, ভুট্রা, আখ, আলু, মিষ্টি আলু, ডাল জাতীয় ফসল মুগ, মসুর, খেসারী, ফেলন, সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চিনা বাদাম, মসলা জাতীয় ফসল মরিচ, পিয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া এবং অন্যান্য ফসল তরমুজ, বাংগি, খিরাই, শসা, পেঁপে ও শীতকালীন শাক-সবজি চাষে কৃষকের সফলতা ও স্ববলম্বী হওয়ার গল্প প্রভাব ফেলেছে স্থানীয় বেকার যুবদের মাঝে। এতে অনেক শিক্ষিত তরুন আগ্রহী হয়ে যুক্ত হচ্ছে কৃষি কাজে। মান্ধাতার আমলের গরু মহিষের হাল চাষ হ্রাস পেয়ে চাষাবাদে যুক্ত হয়েছে ট্রাক্টর, হারভেষ্টর সহ নানাবিধ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। এতে পুরাতন কৃষি চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কৃষকরা পেয়েছে বৈজ্ঞানিক কৃষি সরঞ্জামাদি ও তা ব্যবহারে যথাযথ কারিগরি প্রশিক্ষন, উচ্চ ফলনশীর জাতের বীজ, সার ও কীট নাশক। গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠছে কৃষি ফার্ম। বেসরকারী ও রাষ্ট্রায়াত্ত¡ ব্যাংক থেকে কৃষি ঋনের সহজলভ্যতা ও কৃষি উদ্দোক্তা ঋন পেয়ে কৃষিতে আগ্রহ বেড়েছে তরুন প্রজন্মের। এতে বেকারত্ব হ্রাস পেয়ে বাড়ছে কৃষি উৎপাদন এবং সচল হচ্ছে অর্থনীতির চাকা।

কলাপাড়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বোরো হাইব্রীড জাতের ধান আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৪০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৭৯০ হেক্টর। উফশী জাতের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩৫২৫, আবাদ হয়েছে ২৫৫০ হেক্টর। উফশী জাতের আউশ ধানের আবাদ হয়েছে ৩৩৯০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের আবাদ হয়েছে ৪১০ হেক্টর। উফশী জাতের আমন আবাদ হয়েছে ২৫১০০ হেক্টর, স্থানীয় জাতের আবাদ হয়েছে ৯৩৯০ হেক্টর। গম আবাদের লক্ষ্য মাত্র ছিল ১০হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩০ হেক্টর। ভুট্রা আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১২৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৭৪৭ হেক্টর। আখ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ২০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর। আলু আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ২৭০ হেক্টর। মিষ্টি আলু আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৫৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৪০ হেক্টর। এছাড়া ডাল জাতীয় ফসল মুগ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৫৫৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৩২৫ হেক্টর। মসুর আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৫ হেক্টর। খেসারী আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৪০০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪৪৩৫ হেক্টর। ফেলন আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩৮৫০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৩৮২ হেক্টর।

সূত্রটি আরও জানান, গত অর্থ বছরে তেল জাতীয় ফসল সরিষা আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ২০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ৬০ হেক্টর, তিল লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৪০ হেক্টর, অর্জন ১০ হেক্টর, সূর্যমূখী লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৫০ হেক্টর, অর্জন ৫৫০ হেক্টর, চিনাবাদাম লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৬৫০ হেক্টর, অর্জন ৫৬৫ হেক্টর। মসলা জাতীয় ফসল মরিচ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৬৮০ হেক্টর, অর্জন ৫৭০ হেক্টর, পিয়াজ লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর, অর্জন ৩০ হেক্টর, রসুন লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৬০ হেক্টর, অর্জন ৩০ হেক্টর, হলুদ লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর, অর্জন ৪০ হেক্টর, ধনিয়া লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৫০ হেক্টর, অর্জন ৯০ হেক্টর। অন্যান্য ফসল তরমুজ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩৫০০ হেক্টর, অর্জন ৯৫০ হেক্টর, বাংগি লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৫০ হেক্টর, অর্জন ১২০ হেক্টর, খিরাই লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৫০ হেক্টর, অর্জন ১৫০ হেক্টর, শসা লক্ষ্য মাত্রা ছিল ১৫০ হেক্টর, অর্জন ১৪০ হেক্টর, পেঁপে আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৫০ হেক্টর, অর্জন ৪০ হেক্টর। এছাড়া শীতকালীন শাক সবজি আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ছিল ৩০০০ হেক্টর, অর্জন হয়েছে ২০৭০ হেক্টর।




উপজেলার ধানখালী গ্রামের কৃষক আউয়াল হাওলাদার (৪৭) বলেন, ’বর্তমান সরকার কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। গরু-মহিষের হাল চাষ’র বদলে কৃষিকাজে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টর, রাইস ট্রান্স প্লান্টার, কম্বাইন হার ভেষ্টার এবং রাইস এন্ড হুইট রিপার। এতে অল্প সময়ে যান্ত্রিক ব্যবহারে অনেক কাজ করা যাচ্ছে।’ কৃষক আউয়াল আরও বলেন,’ বোরো ধান ঘরে তোলার পর ঘূর্নিঝড় ইয়াস’র প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সবজি ক্ষেতের একটু ক্ষতি সাধন করেছে তবে তা উল্লেখ যোগ্য নয়।’

চম্পাপুর গ্রামের কৃষক বিজয় সরকার (৪৫) বলেন, ’কৃষি কাজে এখন গ্রামের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আউশ, আমন, বোরো ধানের পাশাপাশি হাইব্রীড, উফশী সহ স্থানীয় জাতের ধান চাষ করছেন কৃষক। কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষন, উঠান বৈঠক ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেয়ে এখন সবাই বেকার না থেকে চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছে। ডাল, তেল, মসলা জাতীয় ফসলের পাশাপাশি তরমুজ, বাংগি, খিরাই, শসা, পেঁপে সহ শীত কালীন শাক সবজি চাষে ভাগ্য বদলেছে গ্রামের অনেক মানুষের।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আ: মন্নান বলেন, ’কৃষিতে সাফল্য অর্জনে কৃষি বিভাগ সর্বদা মাঠ পর্যায়ে কৃষকের পাশে থেকে সঠিক পরামর্শ প্রদান করছে। সঠিক ভাবে চাষাবাদ করতে কৃষকদের প্রশিক্ষন প্রদান ও উঠান বৈঠকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সরকারী বরাদ্দকৃত প্রনোদনার অর্থ সার, বীজ, ভর্তুকি যথাসময়ে কৃষকদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন,’ সার সুবিধা নিশ্চিত করনে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে বিসিআইসি’র ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মিষ্টি পানি সংরক্ষনের জন্য পুকুর খনন কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজ চলছে। কৃষকের স্বার্থে স্লুইজ গেট ব্যবহার নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি।’

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!