শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৭ অপরাহ্ন
সালমা কবির, আপন নিউজঃ কলাপাড়া পৌর শহরের বাজারের মুরগীর দোকানে কাজ করে। বাড়ী উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে। সারাদিন কাজ করে মহাজনের বাসায় খাওয়া দাওয়া করে রাতের মুরগীর দোকানে ঘুমায়, সুমনের সাথে থাকা মানুষ টি ওর মা। খুবই সহাজ সরল মানুষ। মানুষের চাওয়া গুলো স্থানে ভেদে ভিন্ন হয়, কেউ সামান্য কিছুতেই তৃপ্তি পায় আর কেউ মহা কিছুতেও সে তৃপ্তি পায় না। তবে মানব জাতির মধ্যে একটা জায়গায় এসো প্রান্তিক মিল থাকে যেমন সবাই সুখ খোঁজে। সেখানে কোন ভিন্নতা নেই। কেউ গাছ তলায়, কেউ নীচতলায়, কেউ পাচঁতলায় আবার কেউ দশতলায় বসে খুঁজে চলেছে সুখ কে।এ ধারনাটা সুমনের মায়েরও ছিল।
সুমন আমার পূব পরিচিত হলেও ওর মায়ের সাথে এটা আমার প্রথম দেখা। সুমন সব সময় বলে আন্টি আমি আমার সংসারের বড় পোলা অনেক কিছু করা লাগে মোর বাহের শরীর তেমন ভালো না, কাম কাইজ করতে পারে না, মোগো ঘর নাই, বানানোর টাহা নাই আর কতকি প্রলাপ আমাকে দেখে গড়গড় করে বলতে থাকে। ওর বকবকানি থামাতে ৫০/১০০ টাকা দিয়ে সরে গেছি আমিও বহুত বার। সুমন কে নিয়ে হাসি তামাসা করে সবাই। সুমন নাচ, সুমন গান করে বলতেই সুমন শুরু করে দেয়। বোকা টাইপের এই ছেলেটার বুকের বুঁকফাটা আর্তনাদ আমাদের কান অবদি পৌঁছায় না। হটাৎ ই একদিন সুমন দুপুর বেলা তার মাকে নিয়ে আমার বাসায় হাজির। জানতে চাইলাম কে উনি সুমন ? সুমন বড় গলা করে বলে উঠলো আন্টি উনি আমার মা। গ্রাম দ্যা কলাপাড়া আইছে ঘরের অফিসে যাইবে, মুই তো চিনি না হেইয়ার লইগ্গা আমহের দারে লইয়া আইছি। সুমনের৷ মা, বলে উঠলেন- বু গো মোর ছোডো মাইয়ায় কইছে তুমি যাও যদি ঘরের নাম দেতে পারো দুই টাহা গাজী কালুর দরবারে দিমু। আমি নির্বাক তাকিয়ে শুনছিলাম তার কথা গুলো, বলে জানেন বুগো আর কত, ঘরের কষ্টো কষ্টে জীবন শ্যাষ। যদি মরার আগে গুরাগাড়ার লইগ্যা একখান ঘরের নাম দেতে পারতাম তাইলে মইরাও শান্তি পাইতাম। মোগো জীবন তো শ্যাষই। আমি বললাম আমার জানামতে তো এখন কোন ঘরের নাম নেয় না, আমি যখন নাম দিবে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাবো, সুমনের মা বলে উঠলেন এহন বইস্যা, বইস্যা শেষ হইবে সীজন আইবে হেইকালে নাম নেবে বুজি। ভাষা হারিয়ে ফেলছিলাম সুমনের মায়ের কথা আর চোখের পানি দেখে। মায়ের কথার সাথে চোখের পানি দেখে বোকাটে টাইপের সহজ সরল সুমন নিজের বুক চাপড়ে বলে উঠল মা তুমি আব্বারে গিয়া কবা এই সুমন পোলা থাকতে তাকে ঘর পাওয়াই ছাড়বে, এডা তার মার চোহের পানির কছম। মা ছেলের আকুতির কাছে আমি বাক শূন্য। সুমনেরা ২ ভাই ২ বোন বাবা মা সহ ছয়জনের সংসার। মেয়ে দুটো বিয়ে দিলেও বাবার বাড়িতে ই থাকতে হয় প্রায়ই। জীবনের টানাপোড়েনর মাঝে একখানা ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সুমনের পরিবারের সুখ। সুখের ঠিকানাটা জানা থাকলেও পৌছাতে পারছে না সেই অবদি।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply