আমতলী ও তালতলীতে ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সংঙ্কট; উচ্চ মুল্যে সার বিক্রি | আপন নিউজ

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
কলাপাড়ায় দূর্যোগ সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ট্রাক কেনার কথা বলে আপন ভাতিজীর টাকা নিয়ে উধাও আপন চাচা জমে উঠেছে আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন; তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস আমতলীতে ডায়েরীয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংঙ্কট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ জনের বেডে ৩১ জনের চিকিৎসা! কলাপাড়ায় ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ গলাচিপায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, শিশুর মৃ’ত্যু কলাপাড়ায় জমিসংক্রান্ত বিষয় সালিশি বৈঠক শেষে হামলা; তিনজনকে কু’পি’য়ে জ’খ’ম কলাপাড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মা-ছেলে ও ছেলের বউকে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ কাউনিয়ায় কৃষক লীগের ৫২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন তালতলীতে ভাসুরের বিরুদ্ধে ধ’র্ষ’ণ চেষ্টার মামলায় এলাকায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ
আমতলী ও তালতলীতে ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সংঙ্কট; উচ্চ মুল্যে সার বিক্রি

আমতলী ও তালতলীতে ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সংঙ্কট; উচ্চ মুল্যে সার বিক্রি

আমতলী প্রতিবেদকঃ কৃত্রিম সংঙ্কট দেখিয়ে উচ্চ মুল্যে সার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমতলী ও তালতলীতে ১৬ টাকা কেজির ইউরিয়া সার ১৮-২২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম ও বিসিআইসি ডিলারদের দাবী সারের সংঙ্কট নেই। খুচরা ডিলারের দাবী বিসিআইসি ডিলাররা সার দিচ্ছে না। কিন্তু বেশী টাকা দিয়েও কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত সার দুই উপজেলায় আসলেও সার খুজে পাওয়া যাচ্ছে না কৃষকরা। অভিযোগ রয়েছে বিসিআইসি ডিলাররা উচ্চ মুল্যে সার অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে আমতলী ও তালতলীতে সারের সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। দ্রুত সারের কৃত্রিম সংঙ্কট ও উচ্চ মুল্যে সার বিক্রি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।

জানাগেছে, আমতলী ও তালতলী উপজেলায় আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ৭’শ ৯০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আমতলীতে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর এবং তালতলীতে ১৬ হাজার ২’শ ৯০ হেক্টর। ওই জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে দুই উপজেলায় ১ হাজার ৩’শ ৭৮ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার প্রয়োজন। এর মধ্যে আমতলীতে ৯’শ ৭৮ মেট্রিক টন এবং তালতলীতে ৪’শ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত গত সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদার বিপরীতে আমতলীতে ৯’শ ৬ মেট্রিকটন এবং তালতলীতে ৩’শ ৬৫ মেট্রিকটন সার এসেছে। এদিকে চাহিদা থাকায় উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম অক্টোবর মাসের জন্য দুই উপজেলায় ৬’শ ১১ মেট্রিকটন সারের চাহিদা দিয়েছেন। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ২’শ ৭১ মেট্রিকটন সার আসছেও সংঙ্কট কাটছে না। কৃষকরা সার নিতে এসেও সার পাচ্ছে না। উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম ও  বিসিআইসি ডিলারদের দাবী সারের সংঙ্কট নেই। খুচরা ডিলারের দাবী বিসিআইসি ডিলাররা সার দিচ্ছে না। কিন্তু বেশী টাকা দিয়েও কৃষকরা সার পাচ্ছেন না। অভিযোগ রয়েছে বিসিআইসি ডিলাররা উচ্চ মুল্যে সার অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে আমতলী ও তালতলীতে সারের সংঙ্কট দেখা দিয়েছে। দ্রুত সারের কৃত্রিম সংঙ্কট ও উচ্চ মুল্যে সার বিক্রি বন্ধ করে সার সরবরাহের দাবী জানিয়েছেন কৃষকরা।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলা শহর ও প্রত্যান্ত গ্রামা লের ইউরিয়া সারের সংঙ্কট রয়েছে। বিসিআইসি ডিলার ও খুচরা ডিলাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংঙ্কট তৈরি করে বেশী দামে সার বিক্রি করছে। ১৬ টাকার ইউরিয়া সার ১৮-২২ টাকার বিক্রি করছে। ৫০ কেজির ৮’শ টাকার সার ৯০০-১১০০ টাকায় বিক্রি করছে। কৃষকরা বিসিআইসি সার ডিলারদের কাছে গিয়ে সার পাচ্ছে না। আবার তারা বেশী টাকায় গোপনে সার বিক্রি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন গত তিন দিন পূর্বে তালতলীতে বেশ কয়েকটন সার এক ডিলার বেশী দামে বিক্রি করেছেন।
সোমবার  আমতলী পৌর শহরের একে স্কুল, পোষ্ট অফিস সড়ক, পুরাতন বাজার, বাঁধঘাট চৌরাস্তায়সহ বিভিন্ন এলাকার খুচরা ডিলারের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে তাদের দোকানে সার নেই। কিছু দোকানে দুই’এক কেজি সার থাকলেও তা বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে। অপর দিকে গুলিশাখালী ইউনিয়নে বিসিআইসি ডিলার মোঃ ওহাব মিয়ার খেকুয়ানী গুদামে সার থাকলেও তার লোকজন কৃত্রিম সার সংঙ্কট দেখিয়ে দুইজন খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে ২০ টাকা কেজি ধরে সার বিক্রি করাচ্ছেন। কৃষকরা সারের জন্য গুদামে গেলেও সার নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ কৃষকদের।
বৈঠাকাটা গ্রামের কৃষক মাসুম গাজী ও জাফর গাজী বলেন, তিন দিন ঘুরেও আমতলী পৌর শহরের কোন দোকানে সার পেলার না। শেষ সময়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না?

চন্দ্রা পাতাকাটা গ্রামের আজিজ হাওলাদার বলেন, গত পাঁচ দিন আগে মুই ১০ কেজি সার কিনছি ২’শ ১০ টাহায়। এ্যাহোন মোর আরো ১০ কেজি সার লাগে কিন্তু মুই কোনোহানে পাইতেছি না। অনেক সারের দোহান খুঁজজি। দোহানদারের কয় বড় ডিলাররা সার দেয় না, মোরা আপনেগো সার দিুম কোম্মেগোনে।
পাতাকাটা গ্রামের এনামুল হক বলেন, অগ্রিম টাকা দিয়েও এক বস্তা সারের জন্য চার দিন ধরে ঘুরছি কিন্তু পাচ্ছি না।

আঠারোগাছিয়া গ্রামের কৃষক কুদ্দুস হাওলাদার ও কালাম হাওলাদার বলেন, ৯’শ টাকা ধরে ৫০ কেজির বস্তা সার কিনেছি।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, বিসিআইসি ডিলাররা বলেন সার আসে নাই। খুচরা ডিলাররা বলে বিসিআইসি ডিলাররা সার দেয় নাই। আবার গোপনে ডিলার গলাটিপা উপজেলার কৃষকদের কাছে বেশী টাকায় সার বিক্রি করছে। কিন্তু সাধারণ কৃষকরা সার পাচ্ছে না। দ্রুত বেশী দামে সার বিক্রি বন্ধ ও কৃত্রিম সংঙ্কট নিরসনের দাবী জানান তিনি।

আমতলী একে স্কুলের খুচরা ডিলার মোঃ নাজমুল স্টোরের ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বলেন, গত ১ অক্টোবর বিসিআইসি ডিলার ৭০ বস্তা সার দিয়েছিল তা এক দিনে বিক্রি করে ফেলেছি। গত তিন দিন ধরে সার নেই। বিসিআইসি ডিলার সার দিচ্ছে না। কৃষকরা সার নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।

আমতলী পোষ্ট অফিস সড়কের খুচরা ডিলার আজাহার মিয়া বলেন, গত তিন দিন ধরে বিসিআইসি ডিলার সার দেয়নি। অনেক কৃষক সার নিতে আসলেও দিতে পারছি না।
গুলিশাখালী বিসিআইসি সার ডিলার মোঃ ওহাব মিয়া কৃত্রিম সারের সংঙ্কট ও বেশী দামে সার বিক্রির কথা অস্বীকার করে বলেন, ইউরিয়া সারের কোন সংঙ্কট নেই। সকল খুচরা ডিলারদের কাছে প্রয়োজন মত সার পৌছে দেয়া হয়েছে।

আমতলী বিসিআইসি সার ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মহিউদ্দিন মিয়া ইউরিয়া সারের সংঙ্কটের কথা অস্বীকার করে বলেন,  গ্রামে কিছু লোকে গোপনে বেশী দামে সার বিক্রি করতে পারে। কিন্তু উপজেলা শহরে কেউ বেশী দামে সার বিক্রি করছে না।
তালতলী বিসিআইসি ডিলার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, তালতলীতে সার না থাকায় তিন দিন আগে আমতলী উপজেলা থেকে খুচরা ডিলাররা কিছু সার এনে বিক্রি করেছে। ওই সার বেশী দামে বিক্রি করতে পারে। তিনি আরো বলেন, কিছুটা সংঙ্কট থাকলেও আগামী কালের (মঙ্গলবার) মধ্যে সার পৌছে যাবে। তখন আর সার সঙ্কট থাকবে না।
আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, হলদিয়া ও উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের কৃষকরা সার পাচ্ছে না। তাদের অন্য স্থান থেকে সার কিনতে হচ্ছে। ওই দুই গ্রামে সারের সংঙ্কট রয়েছে।

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের ইউরিয়া সারের চাহিদার প্রায়ই এসেছে অল্প কিছু সার বাকী আছে। যে সার এসেছে তাতে সারের সংঙ্কট থাকার প্রশ্নই আসে না। তিনি আরো বলেন, কৃত্রিম সংঙ্কট সৃষ্টি করে কেউ বেশী দামে সার বিক্রি করে থাকে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কাওসার হোসেন বলেন, আমতলী ও তালতলীতে যথেষ্ট সার মজুদ আছে। সারের কোন সংঙ্কট নেই।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!