আমতলীতে একই পরিবারে চারজন অন্ধ! মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিতে চায় ভুমি দস্যুরা! | আপন নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৫ অপরাহ্ন

প্রধান সংবাদ
আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে শেষ সময়ে প্রচারনায় ব্যস্ত প্রার্থীরা; জরিপে এগিয়ে মোতাহার আমতলী একে স্কুল মহাসড়ক থেকে ৪৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কলাপাড়ায় দূর্যোগ সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ট্রাক কেনার কথা বলে আপন ভাতিজীর টাকা নিয়ে উধাও আপন চাচা জমে উঠেছে আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন; তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস আমতলীতে ডায়েরীয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংঙ্কট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ জনের বেডে ৩১ জনের চিকিৎসা! কলাপাড়ায় ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ গলাচিপায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, শিশুর মৃ’ত্যু কলাপাড়ায় জমিসংক্রান্ত বিষয় সালিশি বৈঠক শেষে হামলা; তিনজনকে কু’পি’য়ে জ’খ’ম কলাপাড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মা-ছেলে ও ছেলের বউকে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ
আমতলীতে একই পরিবারে চারজন অন্ধ! মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিতে চায় ভুমি দস্যুরা!

আমতলীতে একই পরিবারে চারজন অন্ধ! মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিতে চায় ভুমি দস্যুরা!

আমতলী প্রতিনিধিঃ
বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের একই পরিবারের চারজন জন্মান্ধ। জীবন যাপন চলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। প্রতিবন্ধিভাতা ও অন্যের সাহায্য সহযোগীতায় চলে তাদের জীবন-সংসার। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার অবলম্বন একটি পানের বরজ গুড়িয়ে দিয়েছে ভুমিদস্যু সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীল ও তার সহযোগীতারা। মাথা গোজার ঠাঁই বসত ঘরটি দখল করতে চান তিনি। ভুমিদস্যূ শিবুর ভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করছে বলরাম। তার লোকজনের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না অন্ধ পরিবারটি এমন অভিযোগ অন্ধ বলরামের। ভুমিদস্যু শিবুর হাত থেকে রক্ষায় প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
জানাগেছে, উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বিধবা জন্মান্ধ শান্তিরানী দাসের একমাত্র পুত্র বলরাম চন্দ্র দাস। জন্মগত ভাবেই বলরাম চন্দ্র দাস অন্ধ। বলরাম চন্দ্রের এক পুত্র ও দুই কন্যা। এর মধ্যে পুত্র সৌরভ দাস ও কন্যা দীপা দাস জন্মান্ধ। ওই পরিবারের ছয়জন সদস্যের মধ্যে চারজন জন্মান্ধ। অন্ধ পরিবারের উপার্জক্ষম একমাত্র অন্ধ বলরাম চন্দ্র দাস। মানুষের সাহায্য সহযোগীতা ও প্রতিবন্ধি ভাতা দিয়ে চলে তার সংসার। সরকারের দেয়া এক খন্ড জমিই তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। ওই জমির উপর নির্মাণ করেছেন একটি ঘর। ঘরের  পেছনে একখন্ড জমিতে ছিল পানের বরজ। পানের বরজের উপরেই নির্ভর করে তার সংসার চলে। অন্ধ বলরামের তিনটি সন্তানই লেখাপড়া করে। বড় মেয়ে দীপা দাস বরিশাল অন্ধ স্কুল থেকে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে। একমাত্র ছেলে সৌরভ বরগুনা অন্ধ স্কুলে নবম শ্রেনীতে লেখাপড়া করে। ছোট মেয়ে সঙ্গিতা কুকুয়া শহীদ সোহরাওয়ারদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে। অন্ধ পরিবারটি পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিনাতিপাত করছে। এদিকে ওই অন্ধ পরিবারের বলরাম চন্দ্র দাসের নামে ১৯৭৩ সালে ৬২ শতাংশ ভিপি সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয় সরকার (যার কেস নং-১৪৩০)। ওই জমিতেই বলরাম একটি ঘর তুলে এবং পানের বরজ দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছে। ওই বন্দোবস্ত জমি স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীল তার বাবার সম্পতি দাবী করে উচ্ছেদের জন্য পায়তারা চালাচ্ছে। গত তিন মাস পূর্বে ওই জমিতে দেয়া বলরামের পানের বরজ ভুমিদস্যু শিবু গুড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ওই অন্ধ পরিবারের মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন শিবু ও তার লোকজন। বাড়ী থেকে তাড়ানো ও হয়রানীর জন্য শিবু মেম্বর অন্ধ বলরাম ও তার স্ত্রী সন্ধ্যারানীকে আসামী করে দুইটি মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলা বর্তমানে আদালতে চলমান আছে। শিবুর লোকজনের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না অন্ধ পরিবারটি এমন অভিযোগ অন্ধ বলরামের। বলরামের স্ত্রী সন্ধ্যারানী দাস সক্ষম হলেও সংসারের সকল ভার তার উপর। চারজন অন্ধ মানুষ দেখভাল এবং মামলার হয়রানীতে দিশেহারা সন্ধ্যারানী।
বলরাম দাস কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, দাদা মুই আর কি হরমু। বাইচ্চ্যা থাকার চাইতে মইর‌্যা যাওয়াই ভালো। মুই অন্ধ, মোর মায় অন্ধ, হ্যারপর একটি মাইয়্যা ও একমাত্র পেলাডাও অন্ধ। মোর সোংসারে ছয়জন মানু হেইয়্যার মধ্যে চাইর জন অন্ধ। দাদা আমনেই কন ক্যামনে চলে। মোরে সরকার এক খন্ড জমি দেছে হেই জমিতে মুই ঘর বানাইছি ও পানের বরজ দিছি। হেই জমি শিবু মেম্বর দখল করতে চায়। প্রত্যেক দিন মোরে ডর দ্যাহায়। দুইডা মামলা দেছে। পানের বর ভাইগ্যা হালাইছে। শিবুর ভয়ে মোরা ঘরে গোনে বাইরাইতে পারি না। মুই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মোর পরিবার ও সরকারের দেয়া বন্দোবস্ত জমি রক্ষা ও শিবু মেম্বরের দেয়া মামলা থেকে বাঁচার দাবী হরি। কান্নাজনিত কন্ঠে বলরাম দাশের স্ত্রী সন্ধ্যারানী দাশ বলেন, আমি আর পারছি না। চারজন অন্ধ নিয়ে খুব কষ্টে আছি।  তারপরও দুঃখ নেই। কিন্তু প্রতিবন্ধিভাতা ও মানুষের দেয়া সাহায্য সহযোগীতা দিয়ে চলে আমার সংসার।
 কিন্তু শিবু মেম্বর আমার এই অন্ধ পরিবারকে উচ্ছেদ করার জন্য পায়তারা চালাচ্ছে। শিবু মেম্বর হয়রানী, ভয়ভীতি থেকে রক্ষায় সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দাবী জানাই।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য শিবু চন্দ্র শীলের সাথে মুঠোফোনে (০১৭১৪৫৭৫৮২৯) যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ওই পরিবারের সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!