
রিপোর্ট: এস এম আলমগীর হোসেনঃ
কলাপাড়া হাসপাতালে কোনো নিয়ম মানছেন না ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা (মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ)। যখন-তখন ঢুকে পড়ছেন চিকিৎসকের কক্ষে। কখনও রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসক্রিপশন নিয়ে শুরু করেন টানাহ্যাঁচড়া। এছাড়াও মোবাইল ফোনে প্রেসক্রিপশন ছবি তুলে নিচ্ছে তারা।
এতে রোগীরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছেন।
কলাপাড়া হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক এবং জরুরী বিভাগের গেটে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষেধ লেখা রয়েছে। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা ওই নিষেধ মানছেন না।
তারা হাসপাতালের বাইরে ব্যাগ রেখে অনায়াসে রোগীর দর্শনার্থী সেজে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। আর এরই মাঝে কাজ সেরে নিচ্ছেন। নানা কৌশলে আগন্তুক রোগীদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দিয়ে সকাল ১০টা থেকেই তারা পুনরায় ভেতরে ঢুকে পড়েন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের থাকে জটলা। চিকিৎসকদের কক্ষ থেকে রোগীরা বেরিয়ে এলেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া শুরু করেন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
এতে অনেক রোগীই ভয়ে আঁতকে ওঠেন।
শুধু টানাহ্যাঁচড়াই নয়, কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে থাকা মোবাইল ফোনে প্রেসক্রিপশনটির ছবি তুলে রাখে।
অনেক সময় দেখা যায়, মোবাইল ফোনে তোলা ছবি দিকে বারবার দেখে এবং কতক্ষন পর মানিব্যাগ থেকে ভিজিডি কার্ড বের করে কলম দিয়ে কি জানি লিখে তারপর ডাক্তারের সামনে রেখে চলে আসে।
ভিজিডি কার্ডের রহস্যটি জানা যায়নি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের কার্যক্রম সকাল ৮ টায় শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর আড়াইটায়। সকাল থেকে সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের প্রবেশের অনুমতি রয়েছে। তবে শীর্ষস্থানীয় দুই-একটি ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ ছাড়া এ নিয়মনীতি কেউ মানছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের বাইরে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সময় না দেয়ার জন্য প্রত্যেক চিকিৎসককে নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে এ নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা চরমভাবে উদাসীন।
জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় অর্ধশত রিপ্রেজেন্টেটিভ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির হয়ে হাসপাতালে কাজ করছেন। প্রতিটি কোম্পানি থেকে বিক্রয় প্রতিনিধিদের ওপর একটি চাপ থাকে নির্দিষ্ট ওষুধের বিক্রি বাড়ানোর। আর ওষুধের বিক্রি বাড়ানো ও লক্ষ্য মাত্রা পূরণের ওপর নির্ভর করে তাদের চাকরি। এ কারণে প্রেসক্রিপশনে বেশি ও প্রতিটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওষুধ লেখাতে অনেক সময় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। চিকিৎসকদের ‘ম্যানেজ’ করতে নগদ টাকা অথবা প্রয়োজনীয় উপহার কোম্পানির পক্ষ থেকেই সরবরাহ করা হয়। এদের কারণে চিকিৎসকদের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: চিন্ময় হাওলাদার নিজে হাসপাতাল চত্বরে থাকা ওষুধ প্রতিনিধিদের ডেকে বলে দেন যে পরবর্তীতে তোমাদের হাসপাতাল চত্বরে দেখলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।
এছাড়াও ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা যাতে ডাক্তারের চেম্বার বা সামনে না থাকতে পারে তার জন্য অন্য ডাক্তারদের সজাগ থাকাতে বলা হয়।
এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, চিকিৎসকের সাক্ষাতের সময় সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত।
প্রতি সপ্তাহে তাদের একটি টার্গেট দেয়া হয়।
ওই টার্গেট অনুপাতে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন কিনা, তা-ও মনিটরিং করতে হয়। প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করানোর জন্য মোবাইলে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে রাখতে রোগীর প্রেসক্রিপশন দেখতে হয়। আর তার জন্য সকাল থেকে হাসপাতালে থাকতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চিকিৎসকরা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন। এর প্রধান কারণ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে বিভিন্ন উপহার নেয়া। এসব উপহারের মধ্যে রয়েছে ঘরে ফার্নিচার, এসি, ফ্রিজ, টেলিভিশন, ল্যাপটপসহ নানা জিনিস। এর ফলে চাপে পড়ে চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধসহ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ লিখছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: চিন্ময় হাওলাদার বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিসহ ল্যাব-ক্লিনিকের লোকদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে।
এ আইন না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply