বৃহস্পতিবার, ০১ Jun ২০২৩, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
বরিশাল অফিসঃ
নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া পুরাতন ফেরীঘাট এলাকায় টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করছেন ওই ইউনিয়নের তহসিলদার আলতাফ হোসেন, এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। ওই এলাকার অসাধু কিছু মানুষকে ম্যানেজ করে লকডাউনের শুরু থেকেই এই কাজ করছেন তিনি।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের পজেটিভ রোগী পাওয়ায় ১২ এপ্রিল লকডাউন করা হয় বরিশাল জেলা। তার চারদিন পরে ১৬ এপ্রিল ঝালকাঠি জেলাও লকডাউন করা হয়। দুই জেলা লকডাউন কার্যকর করতে নৌ, সড়ক ও আকাশ পথের সকল যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে দপদপিয়া পুরাতন ফেরীঘাট এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানা চালু থাকায় শ্রমিকরা বেকায়দায় পরে।
উৎপাদন কারখানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনটি কারখানার সহস্রাধিক শ্রমিকের যাতায়াতের জন্য একটি ট্রলার ভাড়া করা হয় যেন শ্রমিকদের নদীর ওপার থেকে আনা নেওয়া করা যায়।
ওই কর্মকর্তা জানান, আমরা জেনেছি ঘাটটিতে ট্রলার চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এমনকি এখান থেকে অন্য কোন মানুষ পারাপার করাতেও নিষেধ করেছেন ইউএনও। সে কারনে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই আমরা বিশেষভাবে ট্রলারের ব্যবস্থা করি।
কিন্তু করোনার মধ্যেই ‘ট্রলার বন্ধ’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কিছু লোক এসে ট্রলার চলাচল চালু করেন। এমনকি তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫ টাকার বদলে ১০ টাকা করে আদায় শুরু করেন। শেষে আমাদের কারখানার ট্রলার বাতিল করে দেই। অন্যথায় ওই ঘাট থেকে শ্রমিক যেতে দিত না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দপদপিয়া ইউনিয়নের তহসিলদার আলতাফ হোসেন খাস কালেকশনের নামে তার কাছের মানুষকে বসিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। টাকা উত্তোলনকারীর নাম কালু গাজী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অতীতে তিনি ডাকাতি পেশায় যুক্ত ছিলেন। এমনকি কিছুদিন আগে অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে আটক হন তিনি। তিনি ঘাটে বসে থেকে লকডাউন উপেক্ষা করে ট্রলার চলাচল করান এবং খাস কালেকশনের নামে টাকা উত্তোলন করেন। মূলত, কালু গাজীর অতীত কর্মকান্ডের কারনে স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না। সেইসাথে স্থানীয় তহসিলদার আলতাফ হোসেন সমর্থন দেওয়ায় ওই ঘাটে কোন সরকারি নির্দেশাই মানা হচ্ছে না।
বিগত তিনদিন (৬,৭ ও ৮ এপ্রিল) ধারাবাহিকভাবে পুরাতন ফেরীঘাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে ১০ টাকা করে যাত্রী প্রতি আদায় করছেন কালু গাজী। যাত্রী পারপারের ছবি তুলতে চাইলে তিনি তাতে বাধা প্রদান করেন।
তিনি জানিয়েছেন, ঘাটে টাকা উঠাতে কেউ নিষেধ করেননি। আমরা প্রতিদিন খাস কালেকশনের আড়াইহাজার টাকা তহসিলদারকে দেই।
যদিও তহসিলদার আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, লকডাউন শুরু থেকে কোন টাকাই তিনি নিচ্ছেন না। আলতাফ হোসেন বলেন, ঘাটে টাকা উত্তোলনে নিষেজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কেউ ট্রলার থেকে টাকা তুলে তা জানি না।
কালু গাজী প্রতিদিন তাকে আড়াই হাজার টাকা দেন এমন প্রসঙ্গে তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন এই তহসিলদার।
নলছিটি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, লকডাউন শুরুর পর থেকে দপদপিয়া পুরাতন ফেরীঘাট এলাকায় নদীতে যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও জরুরী প্রয়োজনে যদি কোন যানবাহন চলে তা থেকে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেউ টাকা উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এই ঘাটে পর্যাপ্ত যাত্রী হলেও দির্ঘদিন ধরে ঘাটটি ইজারা হচ্ছে না। খাস কালেকশনের নামে টাকা উত্তোলনকারী কালুগাজী ও তার সহযোগীরা আলতাফ তহসিলদারকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন অজুহাতে ইজারা বন্ধ করে রেখেছে।
এর আগে ঘাট ইজারা নিয়ে স্থানীয় আরেক শ্রমিকলীগ নেতা শহিদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পরে কালু গাজী। শেষে কালু গাজী ও তার ছেলে বরিশাল নগরীর বাসিন্দা সোহেল গাজী শ্রমিকলীগ নেতা শহিদকে ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল রাতে কুপিয়ে জখম করে এবং দপদপিয়া পুরাতন ফেরীঘাট এলাকা দখলে নেন।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply