আমতলী প্রতিনিধিঃ
আম্পানের ছোবলে ঘড় হাড়ানো বিধবা ছালেহা বেগম দুই বান্ডিল ঢেউ টিণ আর ঘড় তোলার জন্য খরচ বাবদ ৬ হাজার টাকা পেয়ে খুশিতে আত্ম হারা হয়ে বলেন, ‘মুই টিন আর টাহা দিয়া ঘড় উডাইয়া মাইয়া আর নাতি ৩ ডা লইয়া এহন একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু।’ মোরে ইউএনও ছ্যারে টিন আর টাহা দিছে মুই এহন ব্যামালা খুশি। আল্লায় যেন হ্যারে অনেক বড় অফিসার করে। কথা গুলো বলছিলেন আর বার বার চোখ মুছছিলেন।
আমতলী উপজেলার আঠার গাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা ছালেহা বেগম। তার স্বামী মো. নুরুল ইসলাম মৃধা ৯ বছর আগে মৃত্যু বরন করেন। মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়ে মাহফুজা এবং ৩ নাতি নিয়ে পৈত্রিক সম্পতির উপর একটি খড়ের ঘড় তুলে বসবাস করে আসছেন। গত ২৪ মে শনিবার প্রলঙ্কয়রী ঘূর্নিঝড় সুপার সাইক্লোন আম্পানের ছোবলে বিধবা ছালেহার বসত ঘড় টুকু তছনছ হয়ে যায়। এর পর ছালেহা ৩ নাতি আর মেয়েকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছিল কোথায় টাকা পাবে, কিভাবে ঘড় তুলবে। অনেকের কাছে হাত তুলে নিরাশ হয়ে যখন দুশ্চিন্তায় মগ্ন তখনই তার কাছে এক আশার আলো জ্বেলে ছুটে গেলেন আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন। তিনি স্থানীয় সাংবাদিক এবং জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পারেন ছালেহার দুর্দশার কথা। তিনি ছুটে গেলেন অসহায় বিধবা ছালেহার বাড়িতে। ছালেহার জন্য তিনি নিয়ে গেলেন ২ বান্ডিল ঢেউ টিন আর ঘড় তোলার জন্য ৬ হাজার টাকা । এছাড়া ছালেহাকে খাবার হিসেবে দিলেন প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া উপহার সামগ্রীর চাল, ডাল, আলু আর তেল। শনিবার সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইউএনও মনিরা পরভীন বিধবা ছালেহার হাতে তুলে দিলেন টাকা টিন আর খাবার। এসময় উপস্থিত ছিলেন আঠার গাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ।
টাকা টিন আর খাবার পেয়ে খুশিতে আত্মহারা বিধবা ছালেহা বেগম। তিনি বলেন, ‘মোর স্বামী নাই। নারার ঘড়ে খাইয়া না খাইয়া মাইয়া আর নাতি লইয়া কত কষ্ট কইর্যা থাহি। হেই আর পর আবার বইন্যায় ঘড় পইর্যা মুই দিশা আরা অইয়া গেছিলাম। ইউএনও ছ্যারে মোরে টাহা টিন আর চাউল ডাইল দিয়া ব্যামালা হুগার করছে। মুই টিন দিয়া ঘড় উডাইয়া এহন মাইয়া আর নাতিগো লইয়া এহন একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু। তিনি ঘড় পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বার বার চোখের পানি মুছছিলেন আর বলছিলেন ছ্যারেরে যেন আল্লায় অনেক বড় অফিসার করে। হে না অইলে মুই কিছুই পাইতাম না।’
আঠার গাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন অনেক ভাল মানুষ। তিনি সব সময় মানুষের দুখে কষ্টে ঝাপিয়ে পরেন। তিনি একজন দক্ষ এবং অনেক সৎ অফিসার। তার মত একজন দক্ষ অফিসার পেয়ে আমতলী বাসী আমরা ধন্য। আমি তার সাফল্য কামনা করি।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ‘ঝড়ে একজন বিধবা মহিলার ঘড় পরে গেছে। ঘড়ের অভাবে সে কষ্ট পাচ্ছে জানতে পেরে তাৎক্ষনিক ইউপি চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে টাকা টিন এবং প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া খাদ্য সহায়তার মালামাল নিয়ে শনিবার সকালে তার বাড়িতে উপস্থিত হই। সত্যি সে একজন অভাবী বিধবা নারী। সরকারী সহযোগিতা পাওয়ার মত লোক। তার হাতে সরকারের দেওয়া সহযোগিতার মালামাল তুলে দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’ ‘তিনি আরো বলেন, আমি আমতলী উপজেলায় যতদিন আছি ততদিন এভবে প্রকৃত অভাবী লোকদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।’
Leave a Reply