বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন
আপন নিউজ বিশেষ প্রতিবেদকঃ
করোনা সংক্রমন এড়ানোর নিষেধাজ্ঞায় লকডাউনের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ থাকা কালীন সময়ে কলাপাড়ার এক কলেজ অধ্যক্ষ’র ৪০ হাজার টাকার আপ্যায়ন বিলে বিস্মিত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি। কলাপাড়ায় সরকারী মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজ’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এমন বিল তৈরী করে তা পাশ করার জন্য সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সভাপতি’র কাছে প্রেরন করেছেন। আর অধ্যক্ষ’র ওই বিলের সাথে কোন ভাউচার না থাকায় তা ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বললেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি কলাপাড়া ইউএনও। তবে ৪০ হাজার টাকার ওই আপ্যায়ন বিল’র সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক হিসাব নিকাশ পরীক্ষায় বেড়িয়ে পড়তে পারে অধ্যক্ষ’র পকেটে থাকা কালো বিড়াল, এমন দাবী একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের। যদিও দেশের বালিশ কান্ড, পর্দা কান্ড’র পর অধ্যক্ষ’র এ চা বিল তেমন কোন পুকুর চুরির চেষ্টা নয় এমন বলছেন কলেজ সংশ্লিষ্টরা।
দানবীর মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলাপাড়া উপকূলীয় এলাকার শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য তাঁর নিজ নামে ১৯৭০ সালে মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজে অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার আর্থিক সহায়তার জন্য কলেজ প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী কর্পূরনেছা তৎকালীন সময়ে ৫০ হাজার টাকার একটি তহবিল গঠন করে দেন। ১৯৮৪ সালে কলেজটিকে সরকার এমপিও তালিকা ভূক্ত করেন। শুরুতে এটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ থাকলেও পরবর্তীতে বিএ, বিকম. বিএসসি কোর্স চালু হয় এ কলেজে। এরপর বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক কোর্স চালু হয়। ২০১৩ সালে কলেজটিতে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। ২০১৮ সালে কলেজটিকে জাতীয় করন করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৭৫০, স্নাতক শ্রেনীতে ৫০০ এবং অনার্স পর্যায়ে ৩০০
শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন সেমিষ্টারে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষা বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও ফরম পূরনের ফি বাবদ আদায়কৃত অর্থের কোন রশিদ সরবরাহ করা হয়নি শিক্ষার্থীদের। এখাতে আদায়কৃত টাকার যথাযথ হিসেব নাই প্রতিষ্ঠানটিতে। কর্পূরনেছা তহবিলের আয় ব্যায়ের হিসাব নেই। সরকারী কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ে দেয়া অনুদান’র কোন হিসেব নেই। অভিযোগ রয়েছে কলেজটির আর্থিক বিষয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে। যখন যে অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বে ছিলেন তিনি কলেজ পরিচালনা পর্ষদকে রাজী খুশী রেখে অর্থ লোপাটে ছিলেন সিদ্ধ হস্ত। কলেজ ক্যাম্পাসে আল্লাহ্’র ঘর মসজিদ নির্মান অনুদানের টাকা নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। এমনকি অধ্যক্ষ’র পকেটে থাকা কালো বিড়াল যাতে বেরিয়ে না পড়ে এজন্য কলেজটির আর্থিক সকল হিসাব সংক্রান্ত খাতা, নথি পত্র
ও ভাউচার চুরি গেছে মর্মে কলাপাড়া থানায় দু’বার সাধারন ডায়েরী করা হয়েছে।
এদিকে সরকারী মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজে রহস্যজনক কারনে অভ্যন্তরীন আয় ব্যায়ের হিসাব নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ যুগ ধরে। অডিট কমিটি বলেও কলেজে কখনও কিছু ছিলনা। ২০০৩ সালে একবার শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে অডিট করার কথা
জানা গেছে। তবে তাও ম্যানেজ করা হয় বলে জানিয়েছে সূত্রটি। কলেজটিতে বর্তমানে এমপিও ভূক্ত শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা রয়েছে ৫২। নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী সংখ্যা ৭৯। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে নন এমপিও ভুক্ত কলেজ শিক্ষকদের কলেজ কর্তৃপক্ষকে দু’মাসের বেতন দেয়ার নির্দেশনা থাকার পরও কলেজ থেকে ঈদের পূর্বে তাদের কোন বেতন দেয়া হয়নি।
তাদের মানবেতর জীবন যাপনের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসলেও প্রতিকার মেলেনি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এনিয়ে তারা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ইউএনও বরাবর আবেদন জানানোর পর ইউএনও দেখছি বলে তাদের আশ্বস্ত
করেছেন বলে জানায় সূত্রটি।
মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল আলম বলেন, ’৪০ হাজার টাকার ওই বিল ফেব্রুয়ারী- মে ২০২০ চার মাসের। যা উত্তোলন করা হয়নি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল, বিশিষ্ট জনদের আপ্যায়ন খরচ রয়েছে।
এটি মাসিক ১০ হাজার টাকা খরচ সম্বলিত কলেজ পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদিত। এ সংক্রান্ত রেজুলেশন আছে।’
অধ্যক্ষ শহিদ আরও বলেন.’সরকারী ঘোষনার পর কলেজটির পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ইউএনও আমার স্বাক্ষরের সাথে প্রতিস্বাক্ষর করবেন, এজন্য তার কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে কলাপাড়ার ইউএনও কে? হাসনাত সাহেব না শাহআলম?’
কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ’করোনার বন্ধের মধ্যে অধ্যক্ষ’র ৪০ হাজার টাকার বিলের সাথে কোন ভাউচার না থাকায় এটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কলেজের নন এমপিও শিক্ষকদের বেতন সহ অপর বিষয় গুলো
দেখা হচ্ছে।’
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply