শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি।। তাঁর কাটার বেড়া দিয়ে চলাচলের পথ আটকে দিয়ে জমি দখল করে নিয়েছেন বরিশাল শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত আমতলী উপজেলার দক্ষিণ কালিপুরা গ্রামের বাসিন্দা সামসুল হক প্যাদার ছেলে সেনা সদস্য আরিফুর রহমান প্যাদা ও তার পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন সেনা সদস্য ও সন্ত্রাসী এসে অস্ত্রের মুখে গ্রাম বাসীকে জিম্মি করে বন্দোবস্তের নামে জমি দখল করে নিয়েছেন এবং কাঁচা সড়কের দুই পাশে অন্তত ২০ লক্ষ টাকার শারি (বয়স্ক) গাছ কেটে নিয়ে গেছে। সেনা সদস্য আরিফের ভয়ে গ্রামবাসী আতঙ্কিত। সেনা সদস্য ও তার পরিবারের জিম্মিদশা ও জমি দখল মুক্ত এবং তাদের শাস্তির দাবীতে এলাকাবাসী রবিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
জানাগেছে, উপজেলার কালিপুরা গ্রামের সামসুল হক প্যাদা ও তার স্ত্রী আমেনা বেগম ২০০৬ সালে ভুয়া ভুমিহীন সেজে উপজেলা ভুমি অফিসে জমি বন্দোবস্তের আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা ভুমি অফিস ২০১১ সালে এক একর জমি বন্দোবস্ত দেয়। তার বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে দক্ষিণ কালিপুরা গ্রামের মানুষ বাড়ীঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। বন্দোবস্ত পেয়ে ওই জমি তিনি দখল করতে যান কিন্তু এলাকাবাসীর বাঁধার কারনে দখল করতে পারেনি। পরে এলাকাবাসী বন্দোবস্ত জমি বাতিলের দাবিতে বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন। ২০১১ সালের তৎকালিন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোসাঃ শিরিন শবনম সরেজমিনে তদন্ত করে সামসুল হক প্যাদা ভুমিহীন নয় মর্মে তার বন্দোবস্ত জমি বাতিলের সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশ উপজেলা ভুমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন দেয়। এ ঘটনার পর দীর্ঘ ১১ বছর সামসুল হক প্যাদা নিরবে ছিলেন। গত ২০১৯ সালে তার ছেলে মোঃ আরিফুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগদানের পরে নড়েচড়ে বসে সামসুল হক প্যাদা। ভুক্তভোগী সুলতান, নিজাম, শহীদুল খান, বশির তালুকদার, আকলিমা, হালিমা, সেকান্দার হাওলাদার ও রাজ্জাক মিয়া অভিযোগ করেন গত ১৭ জুন শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত সেনা সদস্য আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে পোশাক বিহীন কয়েকজন সেনা সদস্য ও ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী এসে গ্রামের মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গ্রামবাসীর ভোগদখলকৃত জমি দখল করে নেন। পরে ওই জমিতে তার কাটার বেড়া দিয়ে দেয়। এতে ওই এলাকার ৫০ পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পরিবারের পারিবারিক কবরস্থান দখল করে নিয়েছে তারা। দখল করেই খ্যান্ত হয়নি সেনা সদস্য। ওই জমির ওপর দিয়ে এডিপির অর্থায়নে নির্মিত রাস্তার দুই পাশের অন্তত ৫ শতাধিক শারি গাছ কেটে ২০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। সেনা সদস্যের ভয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। সেনা সদস্য আরিফুর রহমান ও তার পরিবারের এমন কর্মকান্ডের বিচার দাবীতে রবিবার গ্রামবাসী দক্ষিণ কালিপুরা গ্রামে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। নারী ইউপি সদস্য তাসলিমা বেগমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক মোঃ ফারুক আলম, আতিকুর রহমান ও সহকারী শিক্ষক শাহানুর তালুকদার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সেনা সদস্য আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন সেনা সদস্য ও সন্ত্রাসীরা এসে অস্ত্রের মুখে এলাকাবাসীকে জিম্মি করে জমি দখল করে তাঁর কাটার বেড়া দিয়ে দেয় এবং রাস্তার দুই পাশের অন্তত ৫ শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। তারা আরা বলেন, সেনা সদস্যের ভয়ে এলাকার ৫০ পরিবার আতঙ্কিত। প্রতিনিয়ত গ্রামবাসীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। সেনা সদস্য ও তার পরিবারের জিম্মিদশা থেকে আমরা মুক্তি চাই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, দক্ষিণ কালিপুরা গ্রামের প্রায় আঁধা কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার দুই পাশে শারি গাছের মুল পড়ে আছে। গাছ কেটে নিয়ে গেছে। সকল বাড়ীর সামনে তাঁর কাটার বেড়া দেয়া। তাঁর কাটার বেড়া দেয়ায় এলাকার মানুষের চলাচল প্রায় বন্ধ। খামার থেকে গরুর বাহিরে নামতে পারছে না। বিভিন্ন বাড়ীর আঙ্গিনা ও কবরস্থান জুড়ে তাঁর কাটা দেয়া রয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী হালিমা কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, সেনাবাহিনীর লোক আইয়্যা অস্ত্র দ্যাহাইয়্যা মোগো জমি দহল হইর্যা লইয়্যা গ্যাছে। মুই নাইম্ম্যা গাছ কাটতে মানা হরছি। মোরো আরিফইয়্যা পিস্তল দ্যাহাইয়্যা কয় গুইল্লি মারমু। মুই ডরে দৌড়াইয়্যা ঘরে আইছি। মুই এ্যাইয়্যার বিচার চাই।
সেনা সদস্যের বাবা সামসুল হক প্যাদা গাছ কেটে বিক্রি ও জমি দখল করে তাঁর কাটা দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার ছেলে কিছুই করে নাই। আমি জমি না পেলে ছেড়ে দিব।
সেনা সদস্য মোঃ আরিফুর রহমান মুঠোফোনে (০১৭৫৬৭২৩৩৯২) সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বাবার জমির গাছ আমি কেটে নিয়েছি।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply