শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধিঃ বিএনপির নেতাকর্মী-কর্মীদের দাওয়াত না দেয়ায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের আয়োজন করা সকল খাবার খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলেছেন গুলিশাখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কাজী নেতৃত্বে আসা ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী। ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসেন এমন অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার কালিবাড়ী ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদ্রাসায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি গত ৪ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়। আমতলী সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মোঃ ফজলুল হককে কমিটির সভাপতি করা হয়। কমিটির প্রথম সভা গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। সভা উপলক্ষে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৫০ জন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য ওইদিন দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। কিন্তু মাদ্রাসার সভায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্দ হন গুলিশাখালী ইউনিয়ন ও ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে রিপন হাজী নামের এক বিএনপির নেতা বিএনপির নেতাকর্মীদের দাওয়াত না দেয়ার কারন জানতে চান। পরে ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কাজীর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী মাদ্রাসায় এসে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে এবং তাদের দাওয়াত না দেয়ার কারন জানতে চান। পরে শিক্ষকদের গালাগাল করে তারা রান্না করা খাবার খেয়ে ফেলেন এবং অবশিষ্ট খাবার যাতে আমন্ত্রিত অতিথিরা খেতে না পারে সে জন্য পাতিলে টিস্যু, পানি ও তাদের খাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে রাখেন। পরে তারা শিক্ষক, কর্মচারী ও সভায় আমন্ত্রিত অতিথিদের হুমকি দিয়ে চলে যান এমন অভিযোগ শিক্ষকদের। তাদের ভয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আইনী ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। ঘটনার জড়িত রিপন কাজী তার ফেইসবুক আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ ছবি দিয়ে পোষ্ট করেন ন.ম.ম আমজাদিয়া আলিম মাদ্রাসায় পিকনিকের কিছু স্মৃতি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে নিন্দার ঝড় ওঠে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী তাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথি বলেন, গুলিশাখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী ও সাধারণ সম্পাদক রিপন কাজী নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন বিএনপির নেতাকর্মী এসে তাদের দাওয়াত না দেয়ার কারন জানতে চান। পরে তারা শিক্ষক-কর্মচারী ও অতিথিদের গালাগাল করে অতিথিদের জন্য রান্না করা খাবার খেয়ে ফেলেন এবং বাড়ী নিয়ে যান। তারা আরো বলেন, অবশিষ্ট খাবার অতিথিরা যাতে খেতে না পারে তার জন্য খাবারের পাতিলে টিস্যু, উচ্ছিষ্ট খাবার ও নোংড়া পানি ফেলে নষ্ট করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ন.ম.ম আমজাদিয়া মাদ্রাসার ঘটনা আওয়ামীলীগ সরকারের আমলকেও হার মানিয়েছে। এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তারা।
গুলিশাখালী ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাহবুব কাজী খাবার খেয়ে ফেলার কথা স্বীকার করে বলেন, মাদ্রাসায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী নিয়ে অনুষ্ঠান করায় ও আমাদের দাওয়াত না দেয়ায় আমরা খাবার খেয়ে ফেলেছি। কিন্তু কোন খাবার নষ্ট করিনি।
ন.ম.ম আমজাদিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোসেন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মী মাদ্রাসার সভা কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক, কর্মচারী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের গালাগাল করেন। পরে তারা অতিথিদের জন্য রান্না করা খাবার খেয়ে ফেলেন। অবশিষ্ট খাবারে তারা টিস্যু, উচ্ছিষ্ট খাবার ও নোংড়া পানি ফেলে নষ্ট করেছেন। তিনি আরো বলেন, খাবার শেষে তারা আমাদের দেখিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। ভয়ে আমার বিষয়টি কাউকে জানাইনি। এমন গর্হিত কাজের সঙ্গে জড়িত বিএনপি নেতাকর্মীদের শাস্তি দাবী জানান তিনি।
আমতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুল আলম মৃধা এমন গর্হিত কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত গর্হিত কাজ। এমন বিতর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িত বিএনপির যেই নেতাই হোক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন ভিপি বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। দলীয়ভাবে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধের কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। অভিযোগ পেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com
Leave a Reply