তালতলী পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন | আপন নিউজ

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
আমতলী সদর ইউপি নির্বাচনে শেষ সময়ে প্রচারনায় ব্যস্ত প্রার্থীরা; জরিপে এগিয়ে মোতাহার আমতলী একে স্কুল মহাসড়ক থেকে ৪৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কলাপাড়ায় দূর্যোগ সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় ট্রাক কেনার কথা বলে আপন ভাতিজীর টাকা নিয়ে উধাও আপন চাচা জমে উঠেছে আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন; তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস আমতলীতে ডায়েরীয়ার প্রকোপ, স্যালাইন সংঙ্কট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৬ জনের বেডে ৩১ জনের চিকিৎসা! কলাপাড়ায় ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ গলাচিপায় ডায়রিয়ার প্রকোপ, শিশুর মৃ’ত্যু কলাপাড়ায় জমিসংক্রান্ত বিষয় সালিশি বৈঠক শেষে হামলা; তিনজনকে কু’পি’য়ে জ’খ’ম কলাপাড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে মা-ছেলে ও ছেলের বউকে পি’টি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ
তালতলী পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন

তালতলী পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন

আমতলী প্রতিনিধিঃ বরগুনার তালতলীর উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। গত সোমবার রাতে ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পায়রা নদী সংলগ্ন বাঁধে প্রচন্ড ফাটল ধরছে। বাঁধ ভাঙ্গণ শুরু হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন এলাকার ১০ হাজার মানুষ। প্রাণীকুল,বসতভিটা ও ফসলি জমি রক্ষায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানাগেছে, উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ সোমবার রাতে পায়রা নদীর প্রবল স্রোতে আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে বাঁধের দুটি অংশের প্রায় ২০০ মিটার পায়রা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পায়রা সংলগ্ন বাধে প্রচন্ড ফাটল ধরেছে। পায়রার ভাঙ্গনে তেঁতুলবাড়িয়া, সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের ১০ হাজার বাসিন্দা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত ১৬ বছর ধরে পায়রা নদীর ভয়ঙ্কর ভাঙ্গনে তেতুঁলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে জানান বাসিন্দারা। ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নতুন করে বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় তিন গ্রামের ১০ হাজার মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ২০০৭ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় সিডরে তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগর মোহনায় পায়রা নদী সংলগ্ন তেতুঁলবাড়িয়া এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওই বন্যায় নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তত ৪৭ জন মানুষ প্রাণ হারায়। বাঁধ ভাঙ্গার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ করেনি। ১৬ বছর ধরেই তেঁতুলবাড়িয়া বাঁধ এলাকার তেঁতুলবাড়িয়া, সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। সিডরের ৮ বছর পরে অর্থ্যাৎ ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিকল্পনা ছাড়াই তেঁতুলবাড়িয়া ভাঙ্গা বাঁধের ২০০ ফুট দুরে নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে অল্প দিনের মধ্যেই পায়রা নদীর গ্রাসে বিলীন হতে থাকে ওই বাঁধটি। ২০১৭ সালে বাঁধের একাংশ ভেঙ্গে যায়। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ মেরামত করেছে বলে অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য আলম হাওলাদার। ২০২২ সালের ১৫ জুলাই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ আবারো ভেঙ্গে যায়। ওই বছর বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড তেতুঁলবাড়িয়ায় ২৭০ মিটার বাঁধ সংস্কার করে। ওই বাঁধও নড়বড়ে ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর দায়সারা ভাবে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত করলেও ওই বাঁধ বেশী দিন টিকে না। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ উপচে অথবা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে ভালো থাকলেও বর্ষার মৌসুমে ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে জলে ভেসে জীবন যাপন করে বলে জানান ভুক্তভোগী নারী আছিয়া বেগম, হানিফ হাওলাদার, লিটন ও আলী আহম্মদ।

তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামের রোজিনা বেগম ও মোঃ জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, সিডরের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ করেনি। দায়সারা ভাবে বাঁধ নির্মাণ করছে। ১৬ বছরই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। দ্রুত পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ ও ব্লক নির্মাণের দাবী জানান তারা।

একই গ্রামের বাসিন্দা নাজমা ও নুরজাহান বলেন, বড় বইন্যার পর হইতে মোরা বচ্চরের ছয় মাস পানির লগে যুদ্ধ কইর‌্যাই চলতে অয়। মোগো কষ্ট কেউ দ্যাগে না। মোনে অয় মোরা এ দ্যাশের মানু না।

তালতলী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. মোঃ কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সিডরের পর পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করায় গত ১৬ বছরে সাগর সংলগ্ন নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুঁলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের অন্তত দের কিলোমিটার ভুমি সাগর ও নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত টেকসই বাঁধ ও ভাঙ্গণ রোধে ব্লক নির্মাণ করা না হলে পুরো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন তালতলীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। দ্রুত টেকসই বাঁধ ও ব্লক নির্মাণ করে ভাঙ্গণ রোধের দাবী জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, নতুন করে পায়রা ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় পুরো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শন করে ঝুঁকিতে থাকা বাড়ির নারী শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সাইক্লোণ সেন্টার খুলে দেওয়া হয়েছে। বাঁধ মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুদীপ্ত চৌধুরী বলেন, পায়রা নদী সংলগ্ন ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিং বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!